Categories

Pages

Links

যাকাত আদায়ের খুঁটিনাটি ও নিয়ম কানুন

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ এর পঞ্চমটি হলো- যাকাত ইসলামের প্রধান আর্থিক ইবাদত। যাকাত আদান-প্রদানে সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ থাকলে অবশ্যই যাকাত দিতে হয়।

তবে সব ধরনের সম্পদে যাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরজ হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে শর্ত হলো- এসব সম্পদ নিসাব পরিমাণ হতে হবে।

নগদ অর্থ, সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য, পালিত পশু, কৃষিজ পণ্য ইত্যাদির ওপর যাকাত ধার্য হয়। ওয়াকফ সম্পত্তি, সরকারি সম্পত্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস, বাড়িঘর ইত্যাদির ওপর যাকাত ধার্য হয় না।

কৃষিজ ফসল, ফলমূল ইত্যাদির ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছর মালিকের দখলে থাকা শর্ত নয়। তা যখন আহরিত হয় তখন তার ওপর যাকাত (উশর) ধার্য হয়।

সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে। এ হিসেবে অতিরিক্ত মালের ওপরও যাকাত ফরজ হবে। যাকাত নগদ অর্থ দ্বারাও পরিশোধ করা যায় এবং সংশ্লিষ্ট মাল দ্বারাও পরিশোধ করা যায়।

আজকের আলোচনার বিশয়বস্তুঃ কোন কোন জিনিসে যাকাত ফরজ হয় বা যাকাত দিতে হয়।

 

2 জাকাত পাওয়ার যোগ্য

অভাবগ্রস্ত মিসকিন : মিসকিন বলা হয় যার এমন পরিমাণ সম্পদ আছে যা তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়। মিসকিন সে যার কোনো কিছুই নেই। আবার কারও মতে, মিসকিন সেই ব্যক্তি যার কিছু সম্পদ আছে কিন্তু লজ্জা সম্মানের ভয়ে কারও কাছে হাত পাতেন না যারা। তারা জীবন-জীবিকার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা করার পরও প্রয়োজনমতো উপার্জন করতে পারেন না। এত কিছুর পরও নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেন না।

নিঃস্ব ফকির : ফকির বলা হয় যার কোনো সম্পদ নেই, নেই তার উপযোগী হালাল উপার্জন, যা দিয়ে সে তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। যার খাওয়া-পরা ও থাকার স্থান নেই।

জাকাত বিভাগের কর্মচারী : যারা জাকাত আদায়কারী, সংরক্ষণকারী, পাহারাদার, লেখক, হিসাবরক্ষক এবং জাকাতের বণ্টনকারী এদের সবাইকে জাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে। যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য : ইসলামের জন্য যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন কিংবা ইসলামের ওপর তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য এমন লোকদের জাকাতের খাত থেকে জাকাত প্রদান করা।

ঋণগ্রস্তদের জন্য : এমন ব্যক্তি যিনি ঋণ ভারাক্রান্তে জর্জরিত অবস্থায় নিপতিত, তাকে জাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা। তবে যে কোনো অসৎ কাজে বা অপব্যয়ের কারণে ঋণ ভারাক্রান্ত হয়েছে তওবা না করা পর্যন্ত জাকাতের ফান্ড তাকে দেওয়া যাবে না। আবার ঋণ ভারাক্রান্ত এর পর্যায়ে যেমন জীবিত ব্যক্তি শামিল, তেমনি মৃত ব্যক্তিও এর আওতায় পড়ে, মৃত ব্যক্তি যিনি ঋণ রেখে মারা গেছেন। ইমাম কুরতুবি (রহ.)ও তাই বলেছেন। আল্লাহর পথে : আল্লাহর পথ বলতে আকিদা, বিশ্বাস ও কাজের দিক দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছে দেয় যে পথ, ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ এমন কার্যক্রমকে বোঝায় যা খালিস নিয়তে আল্লাহর নৈকট্যলাভের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তা ফরজ নফল ও বিভিন্ন ধরনের ইবাদত-বন্দেগিকে বোঝায়। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) বলেন, ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ যারা জিহাদের ইসলাম প্রচার প্রসারের কাজে নিয়োজিত আছেন।

দাসমুক্তির জন্য : যে ক্রীতদাস তার মালিককে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এখানে এ পর্যায়ে মুসলিম যুদ্ধবন্দীও এ খাতের আওতায় পড়বেন। কাজি ইবনুল আরাবি বলেন, মুসলিম দাসকে যখন মুক্ত করতে জাকাতের খাত থেকে দেওয়া যাবে, ঠিক তেমনি মুসলিম বন্দীকেও কাফিরদের দাসত্ব শৃঙ্খলা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত করার কাজে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা অধিক উত্তম বলে বিবেচিত হবে।

মুসাফিরদের জন্য : এমন ব্যক্তি যার নিজ আবাসস্থলে সম্পদ আছে, কিন্তু সফরে তিনি বিপদগ্রস্ত ও নিঃস্ব অবস্থায় আছেন তাকে জাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা। তবে তার সফর পাপের কাজের বা অনুরূপ পর্যায়ের কোনো সফর হওয়া যাবে না। আল্লামা তাবারি (রহ.) হজরত মুজাহিদসূত্রে বর্ণনা করেছেন, জাকাতের সম্পদ ধনীর হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের নিঃস্ব পথিকেরও একটি হক রয়েছে। যদি সে তার নিজের ধন-সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইসলামিক পাতা